অগ্রিম বুকিং
ট্রাভেল ডেটের কমপক্ষে কয়েক মাস আগে টিকেট বুকিং করুন। বিমান, হোটেল কিংবা ট্রান্সপোর্ট যেটাই হোক না কেন আগে টিকেট কাটলে খরচ অনেক কম হয়। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইনের অফার থাকে, চেষ্টা করবেন অফারগুলো নিতে। তবে কোন কারনে ট্রাভেল ডেট চেঞ্জ হলে কিংবা ক্যান্সেল হলে রিফান্ড পাওয়া যায় না। সুতরাং, ভালো করে প্ল্যান করে নিন।
স্থানীয় ভাষা
যেই দেশে যাবেন সেই দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ২৫-৩০ টি বাক্য শিখে নিন। এই সংক্রান্ত অনেক ভিডিও ইউটিউবে পাবেন। উন্নত দেশগুলো তাদের নিজ নিজ ভাষা ব্যবহার করায়, অনেক দেশে ইংরেজির প্রচলন নেই বললেই চলে। সেসব দেশে কাজ চালানোর মতো কিছু বেসিক বাক্য শিখে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ক্রেডিট কার্ড
যাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড নেই কিংবা যারা ক্রেডিট কার্ডের ঝামেলায় যেতে চান না, তাদের জন্য চমৎকার একটা সমাধান দিচ্ছে ইস্টার্ণ ব্যাংক (ইবিএল)। ইবিএল একটি প্রডাক্ট কার্ড হচ্ছে, ডুয়াল কারেন্সি প্রি-পেইড কার্ড। মাত্র ৫০০ টাকা আর ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকলেই আপনি করে নিতে পারেন একটি একুয়া কার্ড। এই কার্ডে যেই টাকা রিচার্জ করবেন, সেটাই ব্যবহার করতে পারবেন। আর এই কার্ড দিয়ে আপনি অনলাইনে একদিনে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন করতে পারবেন। এই কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে হোটেল বুকিং, প্রডাক্ট কেনা, দেশের বাইরের ট্রান্সপোর্ট বুকিং এর মতো কাজগুলো করতে পারবেন।
পূর্ব পরিকল্পনা
ট্রাভেলের আগে খুব ভালো করে পরিকল্পনা করে নিন। প্রয়োজনে যেসব যায়গায় যাবেন সেসব যায়গা সম্পর্কে ইন্টারনেটে আগে থেকেই খোঁজ করে নিন। বিশেষ করে খোলা-বন্ধের সময়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, টিকেটের মূল্য এগুলো সম্পর্কে আগে খোঁজ নিতে পারেন। অনেক প্রডাক্ট কিংবা বিভিন্ন যায়গার টিকেট অনলাইন থেকে ডিসকাউন্টে অগ্রিম কেনা কিংবা প্রি-অর্ডার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ আমি ১০% ডিসকাউন্টে সিম কিনতে পেরেছি কোরিয়াতে এসে, কারন আমি বাংলাদেশ থেকেই সিম প্রি-বুক করেছিলাম।
স্থানীয় কারেন্সি
ট্রাভেলের সময় আমরা সাধারনত ডলার কিংবা ইউরোতে কারেন্সি কনভার্ট করে নিয়ে যাই। ডলার/ইউরোরর পাশাপাশি, যে দেশে ঘুরতে যাবেন সেই দেশের কিছু কারেন্সিও সাথে নিয়ে নিবেন। অন্য দেশের এয়ারপোর্ট গুলোতে ডলার/ইউরোর রেট কম ধরে, এজন্য যদি আগে থেকেই কিছু স্থানীয় কারেন্সি সাথে রাখেন, তাহলে এয়ারপোর্টে নেমেই জরুরী কেনাকাটা (খাবার /ট্রান্সপোর্ট /সিমকার্ড) করে নিতে পারবেন।
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট
যেই দেশে ট্রাভেল করবেন, চেষ্টা করবেন সেই দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে। এতে আপনার ট্রান্সপোর্ট খরচ অনেক কমে যাবে। বিভিন্ন দেশে ট্রাভেলারদের জন্য ট্রাভেলার্স পাস পাওয়া যায় যেটায় ট্রান্সপোর্ট + বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের টিকেট যুক্ত থাকে, সেগুলো ব্যবহার করলে বিভিন্ন রকম ডিসকাউন্ট পাবেন। এছাড়াও সরাসরি ট্যাক্সি না নিয়ে Uber, Grab এর মতো রাইড শেয়ারিং এপস গুলো ব্যবহার করতে পারেন। একেক দেশে একেক নামে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি রয়েছে। ট্রাভেলের আগে একটু খোঁজ নিয়ে এপস মোবাইলে নামিয়ে রাখতে পারেন।
উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য বান্ডেল অফারযুক্ত কার্ড পাওয়া যায়। একই কার্ড বাস, ট্রেন, সাবওয়েতে ব্যবহার করা যায়। ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে কনভেনিয়েন্ট স্টোরগুলো থেকে রিচার্জ করা যায়। এই কার্ড থাকলে বারবার টিকেট কেনার ঝামেলায় পড়তে হয় না। ট্রাভেলের সময় এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে সুবিধার জন্য বিভিন্ন এপস ব্যবহার করতে পারেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরতে ২ টি জনপ্রিয় এপস রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে: Flixbus, GoEuro. Flixbus দিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক ডেস্টিনেশনে কম খরচে বাস ট্রাভেল করা যায়। GoEuro দিয়ে একাধারে বাস, ট্রেইন ও বিমানের টিকেট কাটা যায়।
ডিসকাউন্ট
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক দর্শনীয় স্থানে প্রবেশের উপর ডিসকাউন্ট কিংবা ফ্রি এন্ট্রি থাকে, এইসব ব্যপারে আগে থেকে একটু খোঁজ খবর রাখলে ট্রাভেল এক্সপেন্স কমাতে পারবেন। এছাড়াও অনেক শহরে ফ্রি বাস সার্ভিস রয়েছে। আবার কোন কোন শহরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের কিছু টিপস ও ট্রিকস আছে, যেগুলো জানা থাকলে ট্রাভেলিং আরো সহজ হয়।
ছোট গ্রুপ
সবসময় চেষ্টা করবেন ছোট গ্রুপ করে ট্রাভেল করতে। গ্রুপের সাইজ হবে ২ থেকে ৪ জন। বেশি হলে কিন্তু আবার অন্য সমস্যা হবে। ছোট গ্রুপে কয়েকজন মিলে একসাথে ঘুরলে: থাকা, খাওয়া আর ট্রান্সপোর্ট খরচ কমে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম টাউট বাটপার থাকে, গ্রুপে একসাথে কয়েকজন থাকলে এসব টাউট বাটপার সহজে সামনে আসে না।
আবহাওয়া
যেই দেশে ট্রাভেল করতে যাচ্ছেন, সেই দেশের বর্তমান আবহাওয়া সম্পর্কে আগে থেকে ধারনা নিয়ে নিবেন এবং সেই অনুযায়ী পোষাক নিতে ভুলবেন না যেন। এতে হটাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনে সমস্যায় পড়বেন না।
পানির বোতল
ট্রাভেলের সময় ছোট খালি পানির বোতল সাথে রাখুন। বাইরের দেশগুলোতে মোটামুটি সর্বত্রই বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। পানি শেষ হয়ে গেলে রিফিল করে নিন। তবে এয়ারপোর্টে একটু খেয়াল রাখতে হবে যে, ইমিগ্রেশন এর সময় যেন বোতল খালি থাকে। কারন, ইমিগ্রেশনে আপনাকে ১০০ মি.লি. এর বেশি কোন তরল পদার্থ বহন করতে দিবে না। পানির বোতল থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। তাই ইমিগ্রেশনের আগেই বোতল খালি করে নিবেন, প্রয়োজনে আবার বিমানের ভিতরে রিফিল করে নিতে পারবেন।
ট্রাভেল এপস
ট্রাভেল প্ল্যানিং এর বেশ কিছু সাইট ও এপস আছে। যেমন আমি ব্যবহার করি inspirock.com, trip.com, Google Trips ইত্যাদি। এসব সাইট অথবা এপসে ডেট আর ডেস্টিনেশন দিয়ে দিলে অটোমেটিক ট্রাভেল প্ল্যান বানিয়ে দেয়। চাইলে আপনি প্ল্যান এডিটও করতে পারবেন।
জিপিএস
যেখানেই ঘুরতে যান না কেন, GPS আপনার ব্যপক কাজে আসবে। ট্রাভেল শুরু করার আগে মোবাইলে গুগল ম্যাপ খুলে নিন, এরপর যে জায়গায় যাচ্ছেন তার এরিয়া সিলেক্ট করে অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে নিন। জরুরি সময়ে ইন্টারনেট না থাকলেও GPS সিগন্যাল দিয়ে সহজেই আপনার ডেস্টিনেশনে পৌছাতে পারবেন। একইভাবে গুগল ট্রান্সলেট খুলে গন্তব্য দেশের ভাষা ডাউনলোড় করে নিতে পারেন।
ব্যাকআপ
আপনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল যেগুলো ট্রাভেলিং এর সময় নিয়মিত দরকার লাগে, সেগুলোকে ক্লাউডে আপলোড করে রাখুন। যে কোন প্রয়োজনে সাথে সাথে ব্যবহার করতে পারবেন। আর পাসপোর্ট, ছবি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের একাধিক কপি সবসময় সাথে রাখবেন।
প্রয়োজনীয় ওষুধ
দেশের বাইরে চাইলেই দোকান থেকে ওষুধ কিনতে পারবেন না। আর আমাদের দেশের মতো সব দেশে ফার্মেসিও নাই। আর থাকলেও প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দিবে না। সুতরাং, দেশের বাইরে ঘুরতে গেলে অবশ্যই ফার্স্ট এইড মেডিকেল কিট সাথে রাখবেন।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস
ট্রাভেলিং এর সময় যেসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যেমন: ক্যামেরা, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি) সাথে নিবেন, সাথে সাথে সেগুলোর চার্জারও নিবেন। সম্ভব হলে এক্সট্রা ব্যাটারি ও পাওয়ার ব্যাংক (অবশ্যই হ্যান্ড লাগেজ কিংবা ব্যাকপ্যাকে এবং কোনমতেই ২০,০০০ মিলিএম্পিয়ারের বেশি নয়) সাথে নিয়ে নিবেন।
সবশেষে বলবো, দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই যান না কেন, মাথায় রাখবেন যে আপনি আপনার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছেন। এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আপনার একার দ্বারা করা কাজের কারনে অন্য দেশের লোকেরা আমাদের দেশকে খারাপ জানে। সবাইকে ধন্যবাদ।