১। যত আগে বুকিং তত কম দামে টিকেট
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বুকিং এর ক্ষেত্রে যত আগে টিকেট বুক করবেন তত বেশি সস্তা পরবে। অভ্যন্তরীন ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও এই নিয়মটি প্রযোজ্য। তাই বেড়াতে যাবার প্ল্যান থাকলে কমপক্ষে ৬০ দিন আগে টিকেট বুক করুন। আপনি আপনার নির্ধারিত যাত্রার দিনের ৭ দিন আগে বা ২ দিন আগে টিকেট বুক করলে যে দামে পেতে, একই টিকেট প্রায় ৪০ থেকে ৬০ % কম দামে পাবেন।
২। ট্রাভেল এজেন্ট এর সাহায্য পরিহার করুন
ট্রাভেল এজেন্ট কে দিয়ে ফ্লাইট বুক না করে নিজে খোঁজ নিয়ে ফ্লাইট বুক করুন। ট্রাভেল এজেন্টদের সাথে বিভিন্ন এরোপ্লেন কোম্পানির চুক্তি থাকে।তারা আপনাকে সস্তায় টিকেট না দিয়ে বরং ব্যবসায় লাভের জন্য ও নিজেদের কমিশনের জন্য সেসমস্ত কোম্পানীর ফ্লাইট বুক করাতে বাধ্য করে ও টাকাও বেশি রাখে।
৩। অনলাইন অ্যাপ বা বুকিং সাইট ব্যবহার করা
অনলাইন বুকিং সাইট থেকে খোঁজ নিয়ে আগে আগে টিকেট বুক করান। এই সমস্ত সাইট তুলনামূলক কম দামে টিকেট বিক্রি করে এবং প্রায় সময়ই ফ্লাইট বুকিং এর ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অফার দেয়। বুকিং ডট কম, এক্সপিডিয়া ডট কম, মেকমাইট্রিপ ডট কম ইত্যাদি সাইটগুলোতে এই সেবা সহজেই পাওয়া যায়। তবে এই মুহূর্তে স্কাইস্যানার নামের অ্যাপটি সহজ ব্যবহার এবং অন্য সাইটগুলোর তুলনায় সস্তায় ফ্লাইট বুক করার জন্য খুবই জনপ্রিয়। এই অ্যাপটি কয়েকটা বুকিং সাইট এ সার্চ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে এর জন্য সবচেয়ে কমদামী ফ্লাইটটি খুঁজে দেয় এবং প্রয়োজনে পছন্দের কোম্পানির বা দিনের ফ্লাইটটির দাম কমলে এলারট দিয়ে জানিয়ে দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পছন্দের ফ্লাইটটি অনেকসময় কমদামে পাওয়া সম্ভব।
৪। প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড অন করে ফ্লাইট সার্চ করা
ফ্লাইট সার্চ করার আগে খেয়াল রাখতে হবে যেন ডিভাইসের ব্রাউজারের ইনকগ্নিটো মোড অন থাকে বা ব্রাউজিং প্রাইভেট থাকে। এটি না থাকলে আপনার ব্রাউজিং হিস্ট্রি কুকিজ এর মাধ্যমে এয়ারপ্লেন কোম্পানির সাইটের কাছে রেকর্ড হয়ে থাকে। ফলে যখন্তারা দেখে যে আপনি তাদের ফ্লাইট একটি বিশেষ দিনের বিশেষ সময়ের জন্য চান এবং বারবার অনলাইনে তার খোঁজ করছেন তখন তারা সেই ফ্লাইটটির দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই কুকি অফ করে প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড অন করে ব্রাউজ করলে পরে যখন অনলাইনে বুক করা হয় তখন টিকেট কম দামে পাওয়া যায়।
৫। প্রক্সি বা ভিপিএন ব্যবহার করা
প্রাইভেট ব্রাউজিং এর পাশাপাশি ভিপিএন বা প্রক্সি ব্যবহার করে নিজের ডিভাইসের অবস্থান ও আইপি এড্রেস লুকিয়ে টিকেট ব্রাউজ করা উচিত। কারণ অনেক কোম্পানি কুকি রাখার পাশাপাশি ডিভাইসের আইপি এড্রেস লগ করে রাখে ফলে আপনার সার্চ সম্পর্কে তাদের কাছে রেকর্ড থেকে যায় এবং তারা এটার সুবিধা নেয়।
আরও পড়ুন : দেশের সকল রুটের বিমান ভাড়া
৬। ছুটির দিনের ফ্লাইট বুকিং এড়িয়ে চলা
ছুটির দিনের আগে পরে টিকেটের দাম বেড়ে যায়। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবারে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকেটের দাম বেশি হবার কথা তেমনি বাইরের দেশে শনিবারের টিকেটের দাম বেশি হয়। এই কয়দিন টিকেট না কেটে আগে আগে কাটা ভাল।
৭। সপ্তাহের মাঝের দিনের সুযোগ নেওয়া
সাধারণত সপ্তাহের মাঝের দিনগুলো যেমন সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতিবারে ফ্লাইটের দাম বাকি তিন দিনের থেকে একটু কম থাকে। জরিপ বলে যে সাধারণত পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই মঙ্গলবারের ফ্লাইট অন্যান্য দিনের থেকে কম দামে টিকেট ছাড়ে। মঙ্গলবারের টিকেট বুক করলে অন্য দিনের থেকে প্রায় ১০ শতাংশ কম টাকা খরচ হয়। তাই এই সুবিধা নেবার চেষ্টা করা যেতে পারে।
৮। বুকিং এর ক্ষেত্রে সময়ের খেয়াল
এশিয়া মহাদেশে সকালের ফ্লাইট অন্য সময়ের থেকে সস্তা। আবার অন্য মহাদেশের সন্ধ্যার ফ্লাইট এর দরদাম সাধারণত একটু বেশি উঠানামা করে। তাই সন্ধ্যার ফ্লাইটে খরচ একটু কম হয়।
৯। সরাসরি বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ
সরাসরি কর্তৃপক্ষের অর্থাৎ বিভিন্ন বিমান কোম্পানির সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক সময় কম দামে ফ্লাইট সার্ভিস বুক করা যায়। এই যোগাযোগ তাদের অফিসের ঠিকানায় ব্যক্তিগত ভাবে গিয়ে বা কোম্পানির ই মেইল অ্যাড্রেসে বা কাস্টোমার সার্ভিস এ ফোনের মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আলাদা আলাদাভাবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
১০। নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব এবং শেষ মুহূর্তের চেষ্টা
বিভিন্ন বুকিং সাইট এবং আয়ারপ্লেন কোম্পানির প্রমোশনাল অফার নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ কারণ অনেকসময় তারা শেষ মুহূর্তে এসে বড় পরিমাণের ডিস্কাউন্ট দিয়ে তাদের সেসমস্ত সিট বিক্রির চেষ্টা করে যেগুলো নানা কারণে যাত্রার নির্ধারিত সময়ের দু এক দিন আগেও তারা বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া উচিত।
১১। সিজনের সময়ে টিকেট না কাটা
সিজন এর সময়টাকে সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। উৎসবের সময়গুলো যেমন ইদ, পুজো, ক্রিসমাস , গরমের ছুটি ইত্যাদি তে প্লেনের টিকেট এর মূল্য সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকে। এসময় সাধারণত ফ্লাইটের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেড়ে যায়। ছুটির সময়ের টিকেট তাই অনেক আগে আগে বুকিং করে ফেলা ভাল।
১২। রাউন্ড ট্রিপ টিকেট
এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রিটার্ন টিকেট না করে সিঙ্গেল সিঙ্গেল ওয়ান ওয়ে টিকেট করলে কম দাম পরে ফ্লাইট বুকিং এর ক্ষেত্রে। তবে এই জিনিসটা সময় এবং কোম্পানি বিশেষে একেক সময় একেক ভাবে কাজ করে। অনেক রুট আছে যেখানে টু ওয়ে টিকেটে কম দাম পরে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রানজিট থাকলে একই এয়ার লাইন্সের টিকেট কাটা উচিত। একই রুটে ট্রানজিটের আগে এক এয়ারলাইন্স এবং পরে অন্য আরেকটি এয়ারলাইন্স এর টিকেট বুক করলে সাধারণত দাম খানিকটা বেশি পরে।
টিকেট কেনার আগে সতর্কতা
অনলাইন অ্যাপ বা বুকিং সাইটগুলোতে টিকেট বুক করার ক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে তারা কিসের কিসের সার্ভিসের মূল্য আপনার টিকেটের সাথে যুক্ত করছে এবং কি কি বাদ রাখছে। সস্তা দাম পেলেই হুট করে টিকেট সবসময় বুক করে ফেলা উচিত নয়। অনেক সাইট আছে যারা শুধুমাত্র আপনাকে টিকেট এর মূল্য দেখাবে। অথচ আপনার মালপত্র, দূরের যাত্রার ক্ষেত্রে খাবার দাবার ও অন্যান্য সার্ভিসের জন্য আলাদা সার্ভিস চার্জ নিবে যা মূল টিকেটের দামের কাছাকাছি চলে যায়। এসমস্ত জিনিস খেয়াল করে ফ্লাইটের টিকিট বুক করতে হবে।
উড়োজাহাজ এখনও শুধু ধনবানদের যাত্রার মাধ্যম হয়ে থাকবে – এ ধারণার অবসান ঘটবে যদি উপরের বিষয়গুলো খেয়াল করে সহজে ও সস্তায় সবাই ফ্লাইটের টিকিট বুক করতে সফল হয়। আশা করি উপরে টিপস গুলো কাজে লাগালে রাইট সাহেবদের স্বপ্নের জাহাজকে সবাই নিজেদের স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই ধরতে সক্ষম হবেন।