ক্যাথে প্যাসিফিকের এয়ারবাস ইঞ্জিন ত্রুটি: ব্যাপক ফ্লাইট বাতিল
September 6, 2024বাংলাদেশের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কোটা আন্দোলন দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। এই আন্দোলনের প্রতিধ্বনি ছিল দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বসবাসকারী দেশগুলোতে। আরব আমিরাতও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
আন্দোলনের প্রতিবাদে আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের একটি অংশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করে। গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি আদালত। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।। এই ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং দেশবাসীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
ডাঃ ইউনুসের হস্তক্ষেপ
এই পরিস্থিতিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডাঃ মুহাম্মদ ইউনুস সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য আরব আমিরাতের শাসকদের প্রতি আবেদন জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় গত ২৮শে অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মি. নাহিয়ান। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের মুক্তি দিতে তখন অনুরোধ জানিয়েছিলেন মি. ইউনূস। তাঁর এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আরব আমিরাত সরকার ইতিবাচক সাড়া দিয়ে সকল গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করে মুক্তি দেয়। এক সপ্তাহের মাথায় সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা আসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নিশ্চিতকরণ
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ডাঃ ইউনুসের এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশিদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
ফেরত পাঠানোর আদেশ জারি
দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস এর বরাত দিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের অ্যাটর্নি জেনারেল চ্যান্সেলর ড. হামাদ আল শামসি আদেশ জারি করে ক্ষমাপ্রাপ্ত ৫৭ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। একই সাথে মি. শামসি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী সবাইকে দেশটির আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন। নিজেদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রেও যেন রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ না হয় এবং জনগণের ক্ষতি না হয়, সেবিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএই'র অ্যাটর্নি জেনারেল। এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইনের প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট মি. নাহিয়ানকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মি. ইউনূস। তারপরও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ যেকোনো দেশে নাগরিকদের পাঠানো আগে তাদেরকে সেদেশের স্থানীয় আইন সম্পর্কে জানানো হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
যে কারণে সাজা হয়েছিল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী, দেশটিতে বিক্ষোভ করা অবৈধ বলে ১৯শে জুলাই বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ৫৭ জনকে আটক করে দেশটির পুলিশ।
ইউএই'র রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ওয়াম) তখন জানিয়েছিল, আটক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তারা "বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন রাস্তায় বড় আকারের মিছিল সংগঠিত করেছিল"। এর ফলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার উপক্রম হয়। সেইসঙ্গে, আইন প্রয়োগের কাজে বাধা এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি হুমকীর মুখে ফেলার অভিযোগও তোলা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে জানিয়েছিলেন যে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছিল এবং সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তরা পুলিশের আহ্বানে সাড়া দেননি। অন্যদিকে, অভিযুক্তদের পক্ষে আদলত থেকে নিয়োগ দেয়া আইনজীবী বলেছিলেন, বিক্ষোভ মিছিল করলেও আটককৃত ব্যক্তিদের কোনো অপরাধমূলক' উদ্দেশ্য ছিলো না। এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন তথ্য-প্রমাণ নেই বলেও বলেছিলেন তিনি।
এরপর আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আটক হওয়া ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আইন ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় ।
মূল্যায়ন
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের হস্তক্ষেপে বিদেশে নির্যাতিত দেশবাসীদের মুক্তি পাওয়া একটি অনন্য ঘটনা। এটি প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ব্যক্তিগত উদ্যোগের গুরুত্ব কতটা।